ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের আওতায় নরসিংদী অংশে নির্মিতব্য বাইপাস সড়ক নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সড়ক বিভাগের মধ্যে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই বাইপাস তাদের ঐতিহ্যবাহী বাজার ধ্বংস করবে, অন্যদিকে সড়ক বিভাগ যানজট ও দুর্ঘটনা কমাতে এটিকে অপরিহার্য বলে দাবি করছে।
২০২১ সালে শুরু হওয়া ১৬ হাজার কোটি টাকার এই বিশাল প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ২১০ কিলোমিটার ছয় লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। এর মধ্যে নরসিংদী অংশে ৫২ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের কাজ চলছে। বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে শিমুলতলা থেকে বাঘাটা পর্যন্ত ৭.০২ কিলোমিটার দীর্ঘ বাইপাস সড়ক, যা বর্তমান মহাসড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন করে ২.০৮ কিলোমিটার পথ কমিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। এই বাইপাসটি শেখেরচর, বাবুরহাট ও মাধবদীকে পাশ কাটিয়ে যাবে।
ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ: ‘হাজার কোটি টাকার বাণিজ্যিক ক্ষতি’
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এই বাইপাস নির্মাণ দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র শেখেরচর ও বাবুরহাট পাইকারি বাজারকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তারা বলছেন, বাইপাস সড়কটি বাজারকে মূল সড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে, যার ফলে ক্রেতাদের আনাগোনা কমে যাবে এবং হাজার হাজার ব্যবসায়ী তাদের জীবিকা হারাবেন। ব্যবসায়ী নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, মাত্র ২ কিলোমিটার রাস্তা কমাতে গিয়ে হাজার কোটি টাকার বাণিজ্যিকভাবে ক্ষতি করা হচ্ছে। তারা দাবি করেন, এই বাইপাস প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী বাজার ধ্বংস হয়ে যাবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের যুক্তি: ‘যানজট ও দুর্ঘটনা হ্রাস’
অপরদিকে, সড়ক ও জনপথ বিভাগ তাদের স্ব-অবস্থানে অটল। তাদের বক্তব্য হলো, এই বাইপাস নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ঢাকা-সিলেট রুটের যানজট কমানো এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি হ্রাস করা। সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমান মহাসড়কের বাঁকগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সড়ক-টি সরলীকরণ করা হচ্ছে। যা যাত্রীদের সময় ও নিরাপত্তা দুটোই নিশ্চিত করবে। একই সাথে তারা আরো আশ্বাস দিয়েছেন যে, শেখেরচর-বাবুরহাট এলাকার সড়কটি প্রশস্ত করে চার লেনে উন্নীত করা হবে। যাতে স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও সুবিধা পেতে পারেন।
ভবিষ্যতের আশঙ্কা: প্রকল্পের বিলম্ব?
ইতিমধ্যে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বাইপাস নির্মাণের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছেন। এই ইস্যুতে দুই পক্ষের মধ্যে সমন্বয় না হলে ১৬ হাজার কোটি টাকার এই মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিলম্ব হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, সরকার কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করে এবং প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ কী হয়।