মুসলিম উম্মাহর জন্য খুশির বার্তা নিয়ে বছর ঘুরে আবারো এলো পবিত্র ঈদুল আজহা। প্রতি বছর-ই শান্তি, সম্প্রীতি আর আনন্দের বার্তা নিয়ে আগমন ঘটে ঈদুল আজহার। এই দিনটি সব ভেদাভেদ ভুলে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে মিলিত হওয়ার দিন। যদিও এবারের ঈদুল আজহার আগমন এমন একটি সময়ে হয়েছে, যখন বিশ্ব একাধিক যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এখনো রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের কোনো সুরাহা মেলেনি।
অপরদিকে গাজায় এখনো গণহত্যা অব্যাহত আছে। মঙ্গলবার গাজার দক্ষিণাঞ্চলে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর নৃশংসভাবে গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলি বাহিনী একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের কাছে নির্বিচার গুলি করে অন্তত ২৭ জন ফিলিস্তিনিকে শহীদ করেছে। এর পূর্বে গত রোববারও গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে হামলার শিকার হয়ে কমপক্ষে ৩১ জন ফিলিস্তিনি শহীদ হয় এবং আহত হয়েছে অনেকে। হামাসের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি অভিযানের অংশ হিসেবে ইসরায়েল গাজায় নির্বিচার ও নৃশংসভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে অবিরত। তাদের হামলায় এরই মধ্যে গাজার বৃহৎ একটি অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
আমরা চাই, যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে সারা বিশ্বের মানুষ রক্ষা পাক। পবিত্র ঈদুল আজহায় মহান আল্লাহর উদ্দেশে নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করা মুসলমানদের প্রাচীন ঐতিহ্য। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি তার প্রিয় বান্দা হজরত ইব্রাহিম (আ.) এবং তার পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-এর সীমাহীন ভক্তি, সর্বোচ্চ ত্যাগের সদিচ্ছা ও গভীরতম আত্মসমর্পণে আল্লাহ তা’য়ালা সন্তুষ্ট হন এবং তিনি ইব্রাহিমকে (আ.) আত্মত্যাগ ও ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ পশু কোরবানি করার নির্দেশ করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় মুসলমানরা সামর্থ্য অনুযায়ী ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের প্রতীক হিসেবে পশু কোরবানি দিয়ে আসছেন। প্রতি বছর মুসলমানদের বৃহত্তম ধর্মীয় অনুষ্ঠান পবিত্র হজ্জের পর-ই কোরবানি দেওয়া হয়। পাঁচ দিন ধরে চলে হজ্জের আনুষ্ঠানিকতা। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লাখ লাখ মুসলমান আরাফার ময়দানে সমবেত হন। এটি মুসলিম ভ্রাতৃত্বের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। পবিত্র ঈদুল আজহা এর উদ্দেশ্য হলো স্রষ্টার সন্তুষ্টির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকা।
আর পশু কোরবানি করা হয় প্রতীকী অর্থে। প্রকৃত অর্থে কোরবানি দিতে হয় মানুষের সব রিপুকে—কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, পরনিন্দা, পরশ্রীকাতরতা। কেবল সৎপথে উপার্জিত অর্থের বিনিময়ে কেনা পশু কোরবানির মাধ্যমেই তা সম্পন্ন হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহর কাছে কোরবানির পশুর রক্ত বা মাংস কিছুই পৌঁছায় না, শুধু পৌঁছায় বান্দার তাকওয়া।
সুতরাং কোরবানির অর্থ ত্যাগ বা উৎসর্গ। আল্লাহতায়ালা প্রিয় বস্তুকে উৎসর্গ করতে বলেছেন। আমরা তার আদেশ পালন করব অন্তরের তাগিদে, মানুষকে দেখানোর জন্য নয়। এ আনন্দময় উৎসবে আমাদের অগণিত পাঠক, সংবাদকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীর প্রতি রইল ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা। পবিত্র ঈদুল আজহার আনন্দ অমলিন হোক প্রতিটি হৃদয়ে। ঈদ মোবারক!